এক বছর পর হত্যার রহস্য উদঘাটন দাবি পুলিশের কচুয়ায় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসে পোষাক কর্মী খুন, গ্রেপ্তার-৩

কচুয়ায় শ^শুরবাড়িতে বেড়াতে আসা আজিম (২৫) নামে এক যুবককে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে নিহত আজিমের স্ত্রী রুবিনা বেগমকে পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। গত রবিবার বাগেরহাট পুলিশের একাধিক দল ঢাকা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ি পুলিশ কচুয়া উপজেলার ছোট চরকাঠি গ্রামে মাটির নিচে পুতে রাখা নিহত আজিমের দেহাবশেষ শরীরের কিছু অংশ উদ্ধার করেছে।
নিহত আজিম সুনামগঞ্জের তাহেরপুর উপজেলার কাউকান্দি গ্রামের মোঃ মনজুল হকের ছেলে। তিনি ঢাকার একটি পোষাক কারখানার কর্মী ছিলেন।
প্রায় এক বছর আগে সুনামগঞ্জের তাহেরপুর উপজেলার কাউকান্দি গ্রামের মোঃ মনজুল হকের ছেলে আজিমকে তার শ^শুরবাড়ির লোকজন কচুয়া উপজেলার ছোট চরকাঠি গ্রামে বসে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। পরে তার লাশ গুম করতে বাড়ির পাশে মাটির নিচে পুতে রাখে বলে গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। এই ঘটনায় কচুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ আবুল হাসান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
দেহাবশেষের মধ্যে পাওয়া গেছে তার ব্যবহ্নত কালো রং এর একটি জিন্সের প্যান্ট, কিছু হাড় ও চুল। উদ্ধার হওয়া এসব দেহাবশেষ নিহত আজিমের বলে ধারণা করছে পুলিশ। এসব দেহাবশেষ পরীক্ষার জন্য ফরেনসিকে পাঠাচ্ছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, পাবনার সদর উপজেলার মিনদাহ গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে মোঃ বিপ্লব মোল্লা (২৫), তার স্ত্রী রিনা বেগম (২০) ও তার শ্যালক কচুয়া উপজেলার ছোট চরকাঠি গ্রামের মোহম্মদ তালুকদারের ছেলে মোঃ সালাউদ্দিন তালুকদার (১৪)।
সোমবার দুপুরে বাগেরহাটের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং এ পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরেন।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের বলেন, গোপণ সংবাদের ভিত্তিতে কচুয়ার একটি হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের একাধিক দল তদন্তে মাঠে নামে। মাঠে নেমে তিনজন সন্দেহভাজনকে পুলিশ প্রথমে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ি মাটির নিচে থেকে একজন মৃত ব্যক্তির শরীরের কিছু দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারনা করছি এসব দেহাবশেষ নিহত আজিমের। ফরেনসিক প্রতিবেদন হাতে পেলে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারব। হত্যার প্রধান আসামী নিহতের স্ত্রী রুবিনা বেগম পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আমরা এখনো গ্রেপ্তার করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, প্রায় সাড়ে চার বছর আগে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় পোষাক কারখানায় কাজের সূত্রে সুনামগঞ্জের আজিমের সাথে কচুয়ার রুবিনার পরিচয় হয়। এরপর তারা দুজনে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পরেই তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায় ঝগড়া বিবাদ লেগেই ছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আতœীয় স্বজনরা তাদের বিরোধ মেটাতে শালিস বৈঠক পর্যন্ত করে। তাতেও তাদের বিরোধ না মেটায় নিহত আজিমের স্ত্রী রুবিনা বেগম ও তার স্বজনরা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তারা কৌশলে আজিমকে ঢাকা থেকে কচুয়ায় তার শ^শুরবাড়িতে বেড়াতে আসতে বলে। আজিম শ^শুরবাড়িতে বেড়াতে আসলে ওইদিন আজিমের ছোট ভায়রা বিপ্লব, শ্যালিকা রিনা ও কিশোর শ্যালক সালাউদ্দিন মিলে খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে অচেতন করে লাঠি দিয়ে মাথাসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত করলে তার মৃত্যু হয়। পরে তার লাশ গুম করতে বস্তাবন্দি করে বাড়ির পাশে বাগানে মাটির নিচে পুতে রেখে দেয়। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছে। আজই তাদের আদালতে তোলা হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post